
নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩। সম্প্রতি তপন থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ কলকাতা কলাকুশলীর নবতম নাট্য প্রযোজনা দিন বদল। মানুষে মানুষে আত্মিক বন্ধন ক্রমশ শিথিল হয়েছে এ সময়ে। এক সময় যে কাজ মানুষের প্রধান নাগরিক কর্তব্য বলে মনে করা হতো, মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবার যে প্রতিশ্রুতি ছিল– সেটা আজ বিলিন হতে হতে তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যস্ততম সমাজ জীবনে প্রত্যেকে ছুটছে নিজের ধান্দায়। পরের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবার সময় কোথায়? নিজের প্রয়োজনেও সে সহায়তা পায় না নিকটজনের। সেই সুযোগে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মোটা টাকার বিনিময়ে সুবিধার ডালি দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী অসহায় পরিবারে। সমাজের এই বর্তমান প্রবণতা কি আশ্বস্তকর নাকি অস্বস্তিকর সেটাই বিচার্য।
দিনবদল নাটকে মৃতের সদগতির জন্য বিদেশে চাকুরীরত একটি ছেলের পরিবারে তার মা বোনের পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ এগিয়ে আসেনি। অসহায় নিরুপায় এই পরিবার বাধ্য হয়েই মোটা টাকার বিনিময়ে একটি প্রাইভেট এজেন্সির সহযোগিতায় মৃতের সদগতির ব্যবস্থা করে।
আবাসনের গুটি কয়েক লোক যারা শারীরিকভাবে সদগতিতে সহায়তা করতে অপরাগ তাদের অত্যুচ্চ আবদারে দাহ কার্যের পরবর্তী শ্রাদ্ধ -শান্তি ও নিয়মভঙ্গ আচার পালন করতে বিলের অংক হু হু করে বাড়তে থাকে। উপায়হীন পরিবারকে তাতেই রাজি হতে হয় বাধ্য হয়ে।
হাস্য রসাত্মক ও গভীর মর্মভেদী এই নাটকের রচয়িতা গৌতম রায় নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমতি রাজশ্রী। এই সংস্থার আগের চারটি নাটকের মত এই নাটকটিও রাজশ্রী বিশেষ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে কিছু জায়গায় তার মস্তিষ্ক প্রসূত ছায়া অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যে নাটকীয় মুহূর্তের সৃষ্টি করেছেন সেটা এক কথায় অনবদ্য। নাটকের প্রতিটি চরিত্রের সাবলীল ও দক্ষ অভিনয় দর্শকদের বিমোহিত করে। বিশেষ করে প্রধান চরিত্রে এজেন্টের ভূমিকায় শ্রী সুদর্শন দাস তার কৌতুক মিশ্রিত অভিনয়ে প্রতিটি দর্শকের নজর কারে।
আলোতে বাবলু সরকার, মঞ্চ সজ্জায় অজিত রায়, আবহ নিয়ন্ত্রণে অলকেশ দে সরকার ও রূপসজ্জায় নব কুমার সরকারের আন্তরিক ছোঁয়া নাটকের চরিত্রগুলো বাস্তবমুখী হয়ে ওঠে।
এই নাটক ভাবায়, এই নাটক আত্মিক বন্ধন সুদৃঢ করার পথ দেখায়, এই নাটক মানবিক গুণের বিকাশ ঘটায়।
নাটকের শেষে সংস্থার সভাপতি ডক্টর সৌরভ চন্দ্র বলেন এই নাটক সামাজিক বন্ধনের ভিত যদি সামান্যতম মজবুত করে তবেই বুঝবো এই নাটকের অভিনয় সার্থক।