সৃঞ্চিণী পোদ্দার, রথতলা: ১৯ জুন, ২০২৪। রথ মানেই হলো রথের মেলা। রথ পুজো নয়। বিভিন্ন জায়গায় রথ হয়। তার সাদৃশ্য দেখা যায় ঠিকই তবে রথকে বুঝতে গেলে উড়িষ্যার পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ দেবের মহাপ্রভুর মন্দিরে যেতে হবে। রথকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে রথের প্রেম। তবে যারা পুরীতে যেতে পারেন না তাদের জন্য পুরীর আদলে সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে প্রতিবছর ধুমধামের সাথে জনস্রোতের মাধ্যমে রথযাত্রা উৎসব পালন করা হয়ে থাকে বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মহাপ্রভু মন্দিরে। ষোড়শ প্রচারে পুজো আরতি এবং প্রসাদ বিতরণের পর রথে অধিষ্ঠান করে পথ ভ্রমণে বের হন জগন্নাথদেব ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবী। যা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যে অন্যতম একটি আকর্ষণ। সম্পূর্ণ পুরীর নিয়ম মেনে চলছে সেই কাজ। আর তা খতিয়ে দেখতে বেলঘড়িয়া রথতলায় এই জগন্নাথ মন্দিরে এসেছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। এমনি জানালেন বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মহাপ্রভু মন্দির কর্তৃপক্ষ।
রথযাত্রা উৎসব হল হিন্দুদের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব যা পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে দেবতা জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রার বার্ষিক যাত্রা উদযাপন করার মধ্যে পালিত হয় । জুন কিংবা জুলাই মাসে আষাঢ় মাসের মোমের চাঁদের দ্বিতীয় দিনে উৎসবটি উদযাপিত হয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কামারহাটি পৌরসভার অন্তর্গত রথতলার মোড়ে একেবারে পুরীর আদলে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে থাকে। বেলঘড়িয়া রথতলা শ্রী শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালনায় বিটি রোডের ধারে রথতলার মোড় জুড়ে, ধুমধামের সাথে পালিত হয়ে থাকে রথযাত্রা উৎসব। যেখানে প্রতিবছর পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে এসে কর্মচারীদের উদ্যোগে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রার জন্যে তিনটি পৃথক রথ তৈরি করা হয়। জোর কদমে চলছে তারই প্রস্তুতি। প্রায় দু মাস ধরে এই রথ নবির্মাণের কাজ চলছে বলে জানায় বেলঘড়িয়া রথতলার শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক সোমনাথ রায় চৌধুরী।
বিভিন্ন রাজ্য থেকে নানা প্রজাতির কাঠ নিয়ে এসে চলছে এই রথ নির্মাণের কাজ। যে রথ গুলি এখানে তৈরি হচ্ছে, তা পুরীর রথ তৈরীর সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই করা হয়। ১৬ চাকা বিশিষ্ট ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দি ঘোষ । ৩৩ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বলভদ্রের রথের নাম হল তালধ্বজ । যা ১৪ চাকা বিশিষ্ট। এবং সুভদ্রা দেবীর রথের নাম দর্পদলন । ৩১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই রথে ১২ টি চাকা আছে। কয়েক হাজার ভক্তদের সমারোহে রথযাত্রা উৎসবের প্রাক্কালে আগামী ২১শে জুন গঙ্গা বক্ষ থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য প্রাণের জল সংগ্রহ করে আনা হবে। পরের দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে সমস্ত জরিবুটি এনে জলের অভিষেকের পর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে রথতলায় জগন্নাথ মন্দিরে সেই জল দিয়ে স্নান করানো হবে দেবতাদের। এইভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে সমস্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুরীর আদলে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রার আরাধনার আয়োজন করা হচ্ছে বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে। যা বছর বছর অগণিত ভক্তদের কাছে উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যে অন্যতম এই বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মন্দিরের মাধ্যমে দুমাস ধরে রথ যাত্রার নানা উৎসব আনন্দের মধ্য দিয়ে মাতিয়ে রাখেন।
শুধুমাত্র এলাকাবাসী নয়। দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্তের সমাগমে রথের দিন সঠিক সময় সূচী মেনে রথে চেপে পথে নামেন জগন্নাথ দেব , বলরাম এবং সুভদ্রা।
বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মন্দির তৈরীর জন্য পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে আজ্ঞা মালা হিসেবে ভগবানের নাভি পদ্ম দেওয়া হয়। যেই সমস্ত কাঠ দিয়ে পুরীতে রথ তৈরি করা হয় সেই কাঠ দিয়েই প্রতি বছর বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মন্দিরের তিনটি রথ রথযাত্রা উৎসবের আগে দু মাস ধরে তৈরি করা হয়। এমনকি শর্তানুসারে, পুরীর মন্দিরের শিল্পীদের নিয়ে এসে মহারানা দিয়ে এই রথ যেন প্রতিস্থাপন করা হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পূজোর অধিকাংশ নিয়মাবলী মেনে পূজো অর্চনা করা হয় এই মন্দিরে। আর তাই ভক্তদের বিশ্বাস , রথ যাত্রা উৎসবের সময় যারা পুরীতে যাওয়ার সুযোগ না পেলেও বেলঘরিয়া রথতলায় প্রতিষ্ঠিত এই জগন্নাথ দেবের মন্দিরে এলে মিটবে সেই তৃপ্তি।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের যারা শিল্পী তাদের তৈরি ভগবানের একই পোশাক একই সাজসজ্জা এমন কি ভগবানের জন্যে তৈরি টায়রা পুরী জগন্নাথ মন্দিরের সাথে সাথে রথ তলার এই মন্দিরে পাঠানো হয় । আর তাই বেলঘড়িয়া রথতলার জগন্নাথ মন্দিরে এলে পুরীর আবেগ , পুরীর মন্দিরের ছোঁয়া , এমনকি পুরীর মাহাত্ম্য সবটাই যেন রথের সাথে সাথে প্রভুর সাজসজ্জা এবং প্রসাদের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। উপস্থিত সাংবাদিকদের এমনই বললেন বেলঘড়িয়া রথতলা জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সোমনাথ রায় চৌধুরী।