Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। কথিত আছে কুম্ভ স্নান মানেই মুক্তির পথ। প্রয়াগরাজ এ ১৪৪ বছর পর মহা কুম্ভের যোগ পড়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ প্রয়াগরাজ এর ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান সেরে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। মহাকুম্ভের প্রায় শেষের পথে এসে দাঁড়িয়ে, মহাকুম্ভে স্নান করার থেকেও আমার কাছে বেশী জরুরী মনে হয়েছে কুম্ভমেলা থেকে কি জানলাম আর কি শিখলাম……
কুম্ভমেলা মানেই নাগা সন্ন্যাসী আর নাগা সন্ন্যাসী দেখলেই কিছু মানুষ তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েন না……..
নাগা সন্ন্যাসী মানেই উলঙ্গ শরীর, সারা শরীরে ছাই মাখা, গাঁজা খায়, লম্বা জটা , হাতে অস্ত্র……. ইসসসস্ !!!!!!
আসুন তবে , একটু আধটু জেনে নিই………
নাগা শব্দটি এসেছে নগ্ন > নাঙ্গা > নাগা
একজন সাধারণ মানুষ থেকে নাগা সন্ন্যাসীতে রূপান্তর হয় বিশেষ কিছু কঠোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে…..
* শুরুতেই তাদের পুরুষাঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ু ছিঁড়ে দেওয়া হয় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যার নাম ‘নাগাকরন’ ……
* এরপর সেই ব্যক্তিকে যোগাভ্যাস, মন্ত্রাভ্যাস, প্রানায়াম ও ধ্যানের মাধ্যমে কঠোরভাবে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়……
* এরপর হয় নাগা সন্ন্যাসীর দীক্ষা যেখানে প্রথমেই সেই ব্যাক্তিকে ‘বিরজা ‘ হোম যজ্ঞের মাধ্যমে নিজেই নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করে নিজের পিন্ডদান করতে হয় এবং সেই যজ্ঞাগ্নিতে নিজের নাম , পদবী, গোত্র, বস্ত্র, আভূষন সব আহুতি দিয়ে আজীবন প্রকৃতির কোলে নগ্ন থাকার শপথ গ্রহণ করে নতুন নামকরণে নিজেকে চিনতে হয়…….
* এরপর শুরু হয় মূল দুটি কঠোর সাধনা ….
1. পঞ্চধূপ সাধনা 2. বারিধারা সাধনা
পঞ্চধূপ সাধনা– গ্রীষ্মের প্রখর তাপে নদী বা সমুদ্রের বালির তটে সাধকের চারপাশে চারটি অগ্নিস্তূপ জ্বলতে থাকে আর পঞ্চমটি জ্বলতে থাকে তার মাথার উপর ; মাথার উপর কিছুটা খড় বিচালি রেখে তার উপর মাটির হাঁড়িতে জ্বলন্ত কয়লা রাখা হয় । এইভাবেই মন্ত্রচ্চারনের সাথে টানা কমপক্ষে একচল্লিশ থেকে একশ আটদিন থাকতে হয় সাধককে……… এরপর শুরু হয়
বারিধারা সাধনা– কঠোর শীতে ব্রাহ্ম মুহূর্তে নদীর ধারে মাথার উপর তেকাঠা নিয়ে বসতে হয় , তেকাঠার উপর রাখা হয় ছিদ্র সমেত মাটির হাঁড়ি যার মধ্যে ঢালা হয় বরফ শীতল জল , সেই জল ছিদ্র পথে মাথা থেকে সারা শরীরে চুঁইয়ে পড়তে থাকে। মাটির হাঁড়ির জল শেষ হওয়ার আগেই আখারার কোনও সহযোগী তা পূর্ণ করে দেন । এই প্রক্রিয়াও পূর্বের পঞ্চধূপ সাধনার মতোই টানা চলতে থাকে……. এই দুই কঠোর সাধনার মাধ্যমে সাধকের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে দেহবোধ লোপ পেয়ে যায় ……..
* এরপর শুরু হয় অস্ত্র শিক্ষা , যেখানে সে মৃত্যুভয় জয় করতে শেখে……
* এরপর শুরু হয় ক্ষুধাকে জয় করার শিক্ষা……
* সবশেষে গুরুর নির্দেশে শুরু হয় ঈশ্বর সাধনা…….
এবার আমার প্রশ্ন——
যে ব্যাক্তি সাধনার এতোগুলো কঠোর পর্যায় ধীরে ধীরে অতিক্রম করে যেখানে তার পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীলতা লোপ পায় , দেহবোধ লোপ পায় , নিজস্ববোধ লোপ পায় , ক্ষুধাবোধ লোপ পায় , ভোগবোধ লোপ পায় সেই ব্যাক্তি অর্থাৎ ‘নাগা সন্ন্যাসী’ কে লক্ষ্য করে আমরা যখন তির্যক মন্তব্য করি তখন আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরি , আমরা নিজেরাই উলঙ্গ, ভন্ড, অসভ্য……

তথ্য সহায়তা- দীপক রায়।

ছবি-(সংগৃহীত)