স্মরণ : সা ঈ দ জা ফ রি
বাবলু ভট্টাচার্য : অভিনয়ের সূত্রে ব্রিটেন পাড়ি দেওয়ার আগে ঈশ্বরের কাছে নিভৃতে প্রার্থনা করেছিলেন- ‘জানি না বিদেশ থেকে কবে ফিরব। কিন্তু আমার প্রথম ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় যেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনাতেই হয়।’
সত্যজিৎ রায়ের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৫৬ সালে এক রবিবারের দুপুরে দিল্লির রিগ্যাল সিনেমা হলে ‘পথের পাঁচালী’ দেখে কেঁদে ফেলার কথা প্রায়শই উঠে আসত তাঁর স্মৃতিচারণায়। বলতেন, সে দিন থেকেই সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি সাঈদ জাফরি। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল প্রায় বছর কুড়ি পর।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবিতে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা মীর রোশন আলির চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান জাফরি।
‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছাড়াও ‘মাসুম’, ‘জালোয়া’, ‘খুন ভারি মাং’, ‘রাম লক্ষণ’, ‘দিল’, ‘আজুবা’সহ ৮৬ বছরের জীবনে অসংখ্য ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
বর্ষীয়ান এই অভিনেতা ‘গান্ধী’, ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’-এর মতো ইংরেজি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তন্দুরি নাইটস’, ‘দ্য ফার প্যাভেলিয়ন’, ‘দ্য জুয়েল অন দ্য ক্রাউন’।
সত্যজিৎ রায় ছাড়াও ডেভিড লিন, জন হাসটন, জেমস আইভরি, রিচার্ড অ্যাটেনবরোর মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন জাফরি। অভিনয় করেছেন শন কোনারি, মাইকেল কেন, পিয়ার্স ব্রসন্যানের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে।
সাঈদ জাফরি এমনই এক বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন, যিনি হিন্দি ও ইংরেজিতে সমান স্বচ্ছন্দ। সমান সাবলীল মঞ্চে ও পর্দায়। একই সঙ্গে সফল ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে।
সাঈদ জাফরির জন্ম ১৯২৯ সালের ৮ জানুয়ারি, ভারতের পাঞ্জাবে। তিনি পড়াশোনা করেছেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াইন বার্গ এলেন স্কুল এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। নয়াদিল্লিতে একটি থিয়েটার কোম্পানি ছিল তাঁর। এরপর অভিনয়ের ওপর উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে, রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট (রাডা) পড়াশোনা করেন এই অভিনেতা।
সাঈদ জাফরিই প্রথম ভারতীয় যিনি যুক্তরাজ্যের ‘অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ সম্মাননা লাভ করেন। এ ছাড়া তাঁর ঝুলিতে ভারতের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ আন্তর্জাতিক আরও বেশকিছু পুরস্কার ও মনোনয়নও আছে।
সাঈদ জাফরি ২০১৫ সালের আজকের দিনে (১৬ নভেম্বর) লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।