স্মরণঃ বি ভূ তি ভূ ষ ণ ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : আপনি হয়ত বহুবার নদীর ধারে কাশবন দেখেছেন, খোলা মাঠ দেখেছেন। হয়ত ট্রেন দেখেছেন, খোলা মাঠের মাঝখানের সরু রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে কু ঝিকঝিক করে সেই ট্রেন। কিন্তু যেই আপনি ‘পথের পাঁচালী’ পড়ছেন, আপনি কিন্তু আপনার সব অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়ে নিজেও অপু-দুর্গার সাথে শিশু হয়ে যাচ্ছেন। পড়ছেন আর যেন অপু-দুর্গার সাথে নতুন পৃথিবী দেখছেন। কি রোমঞ্চ সেই যাত্রায়! যিনি তাঁর কল্পনার চরিত্রগুলোকে এমন সহজ করে পরিচিত ভূবনে নামিয়ে আনতে পারতেন তাঁর নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন নতুন আর এক উপস্থাপনার ঢং। লেখনী যে কত সহজ হতে পারে, কত বাস্তব হতে পারে তা বিভূতি না পড়লে সত্যিই বুঝতে পারা যাবেনা। প্রত্যেকটি চরিত্র মনে হবে এইতো আপনার দেখা কোন একটি চরিত্র।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। মহানন্দ ছিলেন বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত। পান্ডিত্যের জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধী পেয়েছিলেন। মায়ের নাম ছিল মৃণালিনী দেবী। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
বিভূতির পড়াশুনা শুরু হয় পিতার কাছে। পরে নিজ ও পাশের গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়ার পর তিনি বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসাবে পড়াশোনার সুযোগ পান।
পড়াশোনার শুরু থেকে শেষ অবধি তিনি তাঁর প্রখর মেধার পরিচয় রেখেছেন। বার বার প্রথম শ্রেনীতে পাশ করা বিভূতি তাঁর অনার্সও ডিসটিংশন সহ পাশ করেন। পরে এম. এ-তে আইন বিষয়ে ভর্তি হলেও তা আর শেষ করেননি।
পেশা হিসাবে প্রধানত শিক্ষকতাই বেছে নিয়েছিলেন। মাঝে কিছুদিন খোলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়ীতে গৃহশিক্ষক ও সেক্রেটারির কাজ করেন। পরে তার ভাগলপুর এষ্টেটের সহকারী ম্যানেজার হিসাবেও বেশ কিছু দিন কাজ করেন বিভূতিভূষণ।
১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘উপেক্ষিতা’ নামক গল্পের মাধ্যমে তিনি তাঁর লেখালেখি শুরু করেন। পরে ভাগলপুরে থাকার সময় তিনি ১৯২৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ লেখা শুরু করেন। প্রায় তিন বছর সময় ধরে লেখেন এই উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকেই তাঁর শ্রেষ্ট সৃষ্টি ধরা হয়।
যদিও ‘ইছামতী’ লেখার জন্য ১৯৫১ সালে তিনি মরনোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ‘পথের পাঁচালী’র পরবর্তী কাহিনি নিয়ে তিনি ‘অপরাজিত’ নামের আর একটি উপন্যাস লেখেন।
সবকটি লেখনিতেই লেখকের নিজস্ব জীবনের প্রতিচ্ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস ছাড়াও তাঁর লেখা প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, বেশ কিছু ভ্রমণ কাহিনি ও দিনলিপি রয়েছে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালের আজকের দিনে (১ নভেম্বর) মৃত্যুবরণ করেন।