গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১২ এপ্রিল, ২০২৪। রবিবার ১৪ এপ্রিল রবিবার বাংলা ও বাঙালির নববর্ষ। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছর ১৪৩১ সন। অধিকাংশ বাঙালি বাংলা মাসের তারিখ বলতেই পারেন না। কেবলমাত্র যদি পরিবারে কোন শুভ অনুষ্ঠান অথবা পূর্ণিমা অমাবস্যা জানার প্রয়োজন পড়ে তখনই বাংলা ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকার খোঁজ করেন। এইদিন বাবা সাহেব আম্বেদকর এর জন্মদিন। আমাদের নববর্ষের দিনেই বহু রাজ্যে তাদের নিজস্ব প্রথা অনুযায়ী নববর্ষ পালন করেন। কিন্তু বাংলা নববর্ষ নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা নজরকাড়ে এবং সর্বত্রই প্রশংসিত। বহু ব্যবসায়ী দিন নতুন খাতা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে পূজো করেন সেইসাথে নতুন ব্যবসার সূচনা করেন। সাধারণত বাঙালি পরিবার দুর্গাপুজোর সময় ছাড়াও নববর্ষের দিনে নতুন জামা কাপড় সহযোগে সাজসজ্জা করেন। অনুষ্ঠান হবে আর কব্জি ডুবিয়ে ভুরিভোজ হবে না তা কি করে হয়! অতএব খাও দাও মৌজ করো।
একসময় যেটা ছিল বাবু কালচারের রসে বশে থাকার উৎসব পরবর্তী সময়ে জমিদার , বুদ্ধিজীবীর উঠোন পেরিয়ে মধ্যবিত্তের বাড়িতে পৌঁছে যায়। এখন কর্পোরেট কালচারের যুগে হোটেল রেস্তোরাঁয় নববর্ষের খানাপিনার সংস্কৃতির নতুন ধারা বলা যেতে পারে। ভোজন রসিক বাঙালি সারাবিশ্বের নানান ধরনের খাবার চেখে দেখতে পছন্দ করেন। সারা শহরের প্রায় সমস্ত হোটেল রেস্তোরাঁয় বাংলা নববর্ষের দিন খাদ্য উৎসবের আয়োজন করেছেন। সেই উৎসবে সামিল সল্টলেকের গোল্ডেন টিউলিপ হোটেল। কথা প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে আজ থেকে ৮ বছর আগে ২০১৬ সালের ১১ মে চারতারা ঝা চকচকে আধুনিক এই হোটেলের উদ্বোধনে ছিলেন মহিমা চৌধুরী , স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমা ঘোষ ও সাহেব ভট্টাচার্য।
ইতিমধ্যেই ল্যুভর গ্রুপের এই হোটেলের রেস্তোরাঁয় বাঙালির উৎসব পার্বণে রসনাতৃপ্তির বিশেষ আয়োজন করেছেন হোটেল কতৃপক্ষ। এদিনের মেনু লঞ্চ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার সুমন্ত মাইতি বলেন,আগামী বাংলা নববর্ষে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উৎসবে আয়োজন করেছি পয়লার আড্ডা। নববর্ষের মহাভোজের এই আয়োজন তৃতীয় তলের অ্যান্টিপাস্টি রেস্তোরাঁয়। এছাড়াও ৮ম তলে নৈর রেস্তোরাঁয় থাকছে পয়লার টুকিটাকি সেইসাথে পছন্দের পানীয় যা অল্পবয়সীদের আকর্ষণ করবে। অর্থাৎ বাঙালি স্টাটারের আয়োজন। মূল আয়োজন নববর্ষের মহাভোজ ব্যুফেতে থাকছে কাঁচা আম পোড়া শরবত, ঘোল , গন্ধরাজ লেবুর বরফ চা। ভোজের শুরুতেই মিলিমিশি ভাজা এঁচোরের চপ, কুমড়ো ফুলের বড়া, আলুর চপ দিয়ে।
যাদের নিরামিষে অরুচি তাঁদের জন্য থাকছে তোপসে ফ্রাই, মাছের ডিমের বড়া , সঙ্গে মোঘল খানা লাসুনি চিকেন টিক্কা, চিকেন মোমো। আপনি চাইলে নিতে পারেন ভেজ মাঞ্চাউ স্যুপ। প্রধান খাবারের তালিকায় থাকছে মোচা চিংড়ি পাতুরি, স্বাদে ঠাসা ভেটকি ভাজা, কাঁচা আম রসে ভরা কষা মুরগি, ক্লাসিক মাটন রোগান জোস, হংকং স্ট্রিট সি ফুড বলস , ট্যাংরার হাক্কা নুডলস, পনির ইন হট গার্লিক, শুক্তনি, ভাজা মশলার আলুর দম, ধোঁকার ডালনার বাহার, এঁচোরের কালিয়া, ডাল রায় বাহাদুর, মুচমুচে আলু ভাজা, ফুলকো লুচি, কড়াইশুঁটির কচুরি, বাসন্তী পোলাও। শেষ পাতে কাঁচা আমের চাটনি,আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনি, মিক্সড ফ্রুট চাটনি, দইবড়া, সেঁকা পাঁপড়, সাবু দানার পাঁপড়, আচার। প্রায় ৬০ রকম খাবারের মেনুর জন্য বুফেতে প্রতি জন বাবদ মাত্র ১৪২৫/- টাকা দিলেই হবে।
মাত্র ৯৫৫/- টাকায় থাকছে প্রায় একই পদের আয়োজন।
এছাড়াও থাকছে নিরামিষ আমিষ থালি। বাঙালি পেটপুরে খাবারের শেষে মিস্টি খাবে না সেটা প্রায় অসম্ভব বলা যেতে পারে সেই সকল খাদ্য রসিকদের জন্য আছে বেকড রসগোল্লা আর মিষ্টি দই। যদি স্বাদের কথা বলেন এককথায় লাজবাব। বরাবরই খাদ্যের গুণমান বজায় রাখার ব্যাপারে গোল্ডেন টিউলিপের এক আলাদা সুখ্যাতি আছে। নিজে চেখে না দেখলে বোঝা সম্ভব নয় বাঙালিয়ানার শেষ কথা কাকে বলে। পরিবেশনার আন্তরিকতা আর রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জা খিদের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে হলফ করে বলা যেতেই পারে।
ছবি:- সায়ন দেবনাথ।